লিলিফের চাইল কেউ পায়, কেউ পায় না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সরকার যে থুরা থুরা লিলিফ (রিলিফ) দেয় তা কেউ পায়, আবার কেউ পায় না। বছরের শুরুতে বাঁধ ভেঙে ধান তলিয়ে গেছে। অখনে আমরা চলি কিদ্দা, আর খাই কিদ্দা। সাহায্য না বাড়াইলে বাঁচনের কোনও উপায় নাই।’ সংসারের অভাব অনটনের কথা এভাবেই জানালেন সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের মনমইতারচর গ্রামের মেহের আলী।

 চলতি বছর ২৮ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে জেলার ৯০ ভাগ জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। ধান নষ্ট হওয়া ছাড়াও হাওরের মাছ ও হাঁসেও মড়ক দেখা দেয়। এরই মধ্যে শুরু হয় কালবৈশাখীর তাণ্ডব। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জবাসী এখন পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সুযোগ পায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর মধ্যে খোলাবাজারে চাল বিক্রি,ভিজিডি,ভিজিএফ,৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পসহ নানা সহযোগিতা মূল কর্মসূচি নেয় সরকার। আগাম বন্যায় জেলার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আনুমানিক ৩ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সব হারিয়ে কৃষকরা এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন।.

ত্রাণের আশায় বানভাসী মানুষ (ছবি: ফোকাস বাংলা)

ঠিক সময় মতো ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারলে হাওরবাসীর ধানের মাচা সোনালী ধানে পরিপূর্ণ থাকতো। সে জায়গায় আজ তাদের ঘরে একমুঠো ধানও নেই। চারদিকে অথৈ পানি। এর মধ্যেই অভাব-অনটনের মধ্যেই দিন কাটছে হাওরবাসীর।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের তীরবর্তী হরিনগর গ্রামের সাদির মিয়া বলেন, ‘সরকার যদি নিয়মিত ত্রাণ দেয়, তাহলে হাওরবাসী ভাতে মরবে না। ধানপান নেওয়ার পর থেকে আয়-রোজগার একবারে বন্ধ আছে।’

ত্রাণের জন্য হাহাকার

হোসেনপুর গ্রামের ইলিয়াস আলী বলেন, ‘ভরা বর্ষায় হাওর পাড়ের মানুষ বেকার হয়ে পড়েন। কিছু সংখ্যক মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও বেশিরভাগ মানুষের কোনও কাজ থাকে না। শুয়ে বসে দিন কাটে তাদের।’

বড়ঘাট গ্রামের নূরজাহান বেগম বলেন,‘মা-ঝি মিলে অনেক কষ্ট করে কেয়ার জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। ফসল ঘরে উঠলে সারা বছরের খোরাক হতো। সে জায়গায় এখন একবেলা খাওয়ার মতো চাল নেই ঘরে। পেটের তাগিদে একটি মাছ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’

নোয়াগাঁও গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, ‘প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল আর নগদ ৫০০ টাকা দিয়ে কি সংসার চলে? এ চাল দিয়ে তার পরিবারের ১৫ দিনে চলে। বাকি ১৫ দিন কষ্টে থাকি।’.

ত্রাণের আশায় বানভাসী মানুষ (ছবি: ফোকাস বাংলা)

লালপুর দক্ষিণ হাটি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, চৈত্র মাস থেকে দোকানের বিক্রি-বাট্টায় মন্দাভাব, তা এখনও চলছে। সারা দিনে ৫০০ টাকার মালামাল বিক্রি করতে পারেন না।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন রশিদ বলেন,  ‘আগাম বন্যায় হাওর পাড়ের মানুষ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সে তুলনায় সাহায্য সহযোগিতা অপ্রতুল। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে হাওরবাসীর সাহায্যে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন,‘সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় জেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ এখন ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় এসেছে। সম্প্রতি ভিজিএফ কর্মসূচির মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। যারা ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় আসেনি তাদেরকে জিআর রিলিফ দেওয়া হচ্ছে। ১ লাখ ভিজিএফ কার্ড বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্থ হাওরবাসীর জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর